লইয়ার ইজ নট লায়ার

এ সমাজের কিছু মানুষের কাছে লইয়ার বা আইনজীবী মানেই মিথ্যাবাদী, ঘুষখোর, কারো কারো কাছে আইনজীবী মানেই দুর্নীতির বাহক।
শুধু অশিক্ষিত-অজ্ঞদের কাছেই নয়, উচ্চশিক্ষিতদেরও আইনজীবী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায়।
আইনজীবীরা আসলেই কতটা মিথ্যা বলে? আদালতে একজন আইনজীবীর মিথ্যা বলার সুযোগ কতখানিই বা রয়েছে?
এ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই ফৌজদারি মামলার কথায় আসতে হবে।
ফৌজদারি মামলার শুনানিতে আইনজীবীদের মিথ্যা কথা বলার সুযোগ কতখানি থাকে? ফৌজদারি মামলায় মূলত কোনো বিচারপ্রার্থী আইনজীবীর কাছে এসে কখনো বলেন না যে, তিনি অপরাধটি করেছেন। একজন আইনজীবী কোনো আসামির জামিন চাওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা বিচারের সময়ে মামলায় পুলিশ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ও দাখিলকৃত সুরতহাল রিপোর্ট, সাক্ষীদের ১৬১ ধারার জবানবন্দি, চার্জশিট, ডাক্তারের ময়নাতদন্ত, কেমিক্যাল রিপোর্ট, সাক্ষীদের বক্তব্য আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন। আসামির বক্তব্যকে সত্যি ধরে নিয়ে আইনজীবী তার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন।
ফৌজদারি মামলার মূল হল এজাহার। এজাহার দায়ের করে পুলিশ অথবা বাদী। এরপর চার্জশিট দেয় পুলিশ। আদালতে মামলা বিচারের জন্য যায়। শুরু হয় আইনজীবীর কাজ। সাক্ষী হয় এজাহার ও জবানবন্দির ভিত্তিতে। সেখানে বাড়ানো-কমনোর কোন সুযোগ একজন আইনজীবীর নেই।
আর দেওয়ানি মামলাও হয় কাগজপত্রের ওপর ভিত্তি করে। দেওয়ানি মামলায় রায় ও ডিক্রি হয় ডকুমেন্টস অনুযায়ী, কোনো মিথ্যাই কাজে লাগে না। একজন আইনজীবী তো আর কাগজ বানিয়ে আনেন না। অথচ অনেকেই না জেনে বা না বুঝে আইনজীবীদের লায়ার অপবাদ দিয়ে থাকেন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
Advocate শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় add+vocal. অর্থাৎ, অন্যের vocal বা কথাকে যে add করে উপস্থাপন করে, তাকে Advocate বলে।   আদালতে আইনজীবী ব্যক্তিগত কোনো কথা বলেন না। মক্কেল যা বলতে চায়, আইনজীবীর কাজ হচ্ছে তাই আইনের ভাষায় আদালতকে অবহিত করা। সত্য-মিথ্যা যাচাই করার জন্য বিচারক আছেন।
সত্যিকার অর্থে আমরা কেউই দুুুধে ধোয়া তুলশি নই। সকল পেশায় ভালো-মন্দ রয়েছে। ধানের মাঝে কিছু চিটা থাকবে এটা স্বাভাবিক। সমাজে যেমন দুর্নীতিবাজ রয়েছে, তেমনি অনেক মহৎ ও পরোপকারী মানুষও রয়েছেন। তবে শুধু আইনজীবীদের যেভাবে লায়ার বা মিথ্যাবাদী বলা হয়ে থাকে, আসলে আইনজীবীরা সে রকম নয়।
লেখক: জি,এম-আদল 


Comments

Popular Posts